প্রান্তজনের ঈশ্বর: একটি সুন্দর সামাজিক উপন্যাস (বুক রিভিউ)

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার শেষে উপন্যাসটি প্রকাশিত হোল। সংগ্রহে রাখার মত একটি বই। কেন এই উপন্যাসটি আপনি নিজস্ব সংগ্রহে রাখবেন ? খুব সংক্ষেপে একটু জেনে নেওয়া যাক, বাকিটা আপনি পাঠক হিসেবে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া দেবেন।
গল্পের প্রেক্ষাপট কালনা শহর। সময়কাল সেই সত্তরের জ্বলন্ত সময় থেকে বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষপট।
আমাদের চারপাশের সমাজ সততই পরিবর্তনশীল। তার প্রভাব পরে সমাজের সকল স্তরে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হয় প্রান্তিক মানুষগুলো। এরা সারা জীবন এক অসম লড়াই লড়তে লড়তে একসময় কালের নিয়মে হারিয়ে যায়। শিক্ষিত সমাজ এদের একপ্রকার উপেক্ষাই করে। এদের পাশে এমন কেউ থাকেন না যিনি এদের মনোবল বাড়াবে, আত্মবিশ্বাসের সাথে লড়াই করার সাহস দেবে বা ভালো পরামর্শ দেবে।
এই রকম পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের রূপ নিয়ে আসেন একজন ডাক্তার। যিনি এই রকম প্রান্তিক মানুষদের বেচেঁ থাকার ভরসা দেন। তিনি নিজের কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন যে মানবিকতা থাকলে রাজনৈতিক আদর্শ বা পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে মানুষের সেবা করা যায়। বিমল, পঙ্কজ, রূপসার মত আরও অনেকের কাছে তিনি একজন আদর্শ চরিত্র। ডাক্তারি শুরু করেছিলেন দু টাকার বিনিময়ে, পরের দিকে ফি নিতেন মাত্র পাঁচ টাকা। তাও কেউ দিত আবার কেউ দিত না।
লেখক প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় এই সামাজিক উপন্যাসটি লিখেছেন। মূলত উপন্যাসটির চারটি দিক আছে, যা লেখকের সুনিপুণ লেখনীতে ব্যক্ত হয়েছে। একদিকে যেমন প্রান্তিক মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, তাদের দুঃখ, আনন্দ, লড়াই এর খুঁটিনাটি আখ্যান। আরেকদিকে রয়েছে একজন ডাক্তারের নিজের আদর্শে অটল থেকে নিরলস ভাবে মানুষের সেবায় নিজেকে সঁপে দেবার চালচিত্র। শত বাধা, অপবাদ, রাজনৈতিক হুঙ্কারকে উপেক্ষা করে এই প্রান্তিক মানুষদের সুখ - দুঃখের সঙ্গী হয়ে ওঠার গল্প।
এছাড়াও লেখক এই উপন্যাসে বিভিন্ন সময়কে সেই সময়ের রঙে এঁকেছেন। সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিকতার এক বিস্তর পরিবর্তন হয়। কেউ সেটা মেনে নেয় মুখ বুজে, কেউ কেউ গর্জে ওঠে আবার ডাক্তারবাবুর মতন মানুষেরা ঈশ্বরের মতনই অবিচল থাকেন মানুষের সেবায়।
উপরি পাওনা হিসেবে পাঠকের মন জয় করবে কালনা শহরের বর্ণনা এবং ইতিহাসের ছোঁয়া।
আমি জানি, উপন্যাসটি পড়ার পর আপনি অন্তত একবার কালনা শহরটি দেখতে যাবেন। আর যদি যান, তাহলে ডাক্তারবাবুর মূর্তির সামনে এক মিনিট দাড়াবেন।
পাঠ প্রতিক্রিয়া কমেন্ট সেকশনে লিখুন। যার লেখা লেখক এবং সম্পাদকের মতে সবচেয়ে ভালো হবে, তিনি হিজিবিজি র তরফ থেকে বিশেষ সারপ্রাইজ পুরস্কার পাবেন।