ত্রিবেণীসঙ্গমঃ একগুচ্ছ গল্পের ডালি
Updated: 3 days ago

২০২৪ কলকাতা বইমেলায় কথাশিল্পী সুজাতা লাহিড়ী চক্রবর্তী পাঠকদের জন্য নিয়ে এসেছেন এক অনন্য উপহার ত্রিবেণীসঙ্গম । হিজিবিজি পাবলিশার্স এই কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পেরে যথেষ্ট গর্বিত । লেখক এবং পাঠকের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করুন ।
একলা আকাশ বইটি সম্পর্কে জানুন ।
নারী, প্রকৃতির অত্যাশ্চর্য এক সৃষ্টি যার মধ্যে নিহিত থাকে প্রকৃতি স্বয়ং। সময়ের আবর্তনে যার রূপের পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করতে হয় সমগ্র মনুষ্যকুলকে। কখনও সে জায়া, কখনও সে জননী, কখনও সে কন্যা , কখনও সে ভগিনী। বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয় নারীকে। তার কোমল হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে একদিকে যেমন প্রেমের ফল্গুধারা বয়ে চলে, সেইরকম বিরূদ্ধ শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য প্রতিরোধের আগুনও জ্বলে ওঠে সেই হৃদয়ের গোপন অলিন্দে। সর্বংসহা নারী তখন হয়ে ওঠে সংগ্রামের প্রতীক। নিজেকে বিজয়িনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তখন অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হয় নারীকে। মোকাবিলা করতে হয় প্রতিটি প্রতিকূল পরিস্থিতির।
এই বইতে নারীর সেই বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার রূপকে প্রত্যক্ষ করবেন পাঠক। কীভাবে সে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আবার কখনও স্নেহশীলা মাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেমন একদিকে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে তেমনি প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে আপোষ করেও নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখার লড়াই চালাতে হয়েছে। জীবনযুদ্ধের লড়াই নারীকে সবসময় এক রূপ থেকে আরেক রূপে অবতীর্ণ করে। সেই লড়াইয়ের গল্পকে ছয়টি ভিন্ন স্বাদের গল্পে ধরবার চেষ্টা করা হয়েছে। বাকিটা পাঠককুলের বিচার্য বিষয়।
গল্পগুলি সংক্ষেপে
ঋতুমতী
সপ্তম বর্ষীয়া আনন্দময়ী পিত্রালয় থেকে পতিগৃহের উদ্দেশ্যে যেদিন যাত্রা করেছিল সেদিন সে বুঝতেও পারেনি এক কঠিন ভবিষ্যত তার জন্য প্রহর গুণছে। ঘুমন্ত অবস্থায় সে গিয়ে পৌঁছেছিল তার পতিগৃহে। সুসজ্জিত পালকির মধ্যে সালাঙ্কারা নববধূকে ঘুমন্ত অবস্থায় আবিষ্কার করেন তাঁর শাশুড়ি জগত্তারিণী দেবী। যে সুখী গৃহকোণ আনন্দময়ীর জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছিল সেই সুখী গৃহকোণ এক রাতের দুর্যোগে ধূলিসাৎ হয়ে গেল। শশধরকে কামড়াল বিষাক্ত সাপে। সেই সাপের দংশনের অনতিবিলম্বেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল শশধর। শশধরের বিবাহিতা স্ত্রী হিসেবে সহমরণে যেতে হবে তাকে। কিশোরী আনন্দময়ী শিউরে উঠল এই নিদান শুনে। তারপর .........
গোধূলি
দারিদ্র্য যেখানে সংসারের সর্বত্র বিরাজ করে সেখানে মেয়েদের বিদ্যাচর্চা বিলাসিতা বলেই মনে হয়। তার ওপর হতদরিদ্র বাপের গলায় পাঁচ পাঁচটা মেয়ে কাঁটার মতো আটকে থাকে।
প্রতিদিন সন্ধ্যা হবার পূর্বে যখন গোধূলি তার কলেজ থেকে ফিরে আসে তখন তাদের নতুন বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাবিত্রী দেখতে পায় সূর্য তার লাল আভা ছড়িয়ে পশ্চিম আকাশে কেমন ডুবে যাচ্ছে আর সেই গোধূলির লাল আলোয় আকাশটা যেন ভরে উঠেছে। যে গোধূলির আলোয় একদিন নিজের সদ্যজাত কন্যার মুখ দেখেছিল সাবিত্রী প্রথম বারের মতো সেই মেয়ের আলোয় আজ সে নিজেই আলোকিত হয়ে অস্তাচলের দিকে পা বাড়িয়ে দিয়েছে।
জরুল
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে রূপকথা তার বন্ধু ঋতুরাজের বাড়িতে বেড়াতে আসে। সে একটি বন্ধ ঘর আবিষ্কার করে। ঋতুরাজ জানায় ঘরটি সারা বছর বন্ধ থাকে এবং সেই ঘরে প্রবেশ নিষেধ। রূপকথার গলায় একটি জন্ম চিহ্ন ‘জরুল’ দেখে পরিবারের বৃদ্ধ কুল পুরোহিত রূপকথাকে ‘কত্তা মা’ বলে সম্বোধন করেন। ধীরে ধীরে অনেক রহস্য ঘনীভূত হয় আর উন্মোচিত হয় জমিদার বাড়ির এক রোমহর্ষক ইতিহাস।
ত্রিবেনীসঙ্গম
শিলাবতী, ইরাবতী এবং ইন্দ্রাবতী এই তিন নারীকে নিয়ে গল্প ত্রিবেনীসঙ্গম। তিন জনেই ভিন্ন বয়সের এবং ভিন্ন পরিবেশ ও সংস্কৃতি থেকে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের জীবনের লড়াই একই। সময়ের স্রোতে তারা পরস্পরের সান্নিধ্যে আসে এবং নতুন করে জীবনকে গড়ে তোলে।
নগ্নিকা
নিতান্তই অভাবের তাড়নায় অতসী চিত্রকর হীরক সেনের প্রস্তাবে রাজী হতে বাধ্য হয়েছিল। পরপুরুষের সামনে সামনে বিবস্ত্র হতে হবে, নিজের ভাগ্যকেই দোষ দিয়েছে অতসী। কিন্তু তার পরিবার, পঙ্গু স্বামী, শ্বাশুড়ি এনারা যদি জানতে পারে? অজানা এক ভয়ে আতঙ্কে শিউরে ওঠে অতসী।
বসন্ত বাতাসে
এক প্রকার জেদের বশেই শিমুল তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে তমালের সংসার ছেড়েছিল। অপ্রত্যাশিত ভাবেই পুরুলিয়ায় শিমুলের সাথে দেখা হয় তার প্রথম প্রেমিক পলাশের সাথে। পলাশ কি মেনে নেবে শিমুলকে? শিমুল কি আবার ফিরে যাবে তমালের কাছে?